ডার্ক ওয়েব – ইন্টারনেটের এক বিচিত্র জগত

প্রযুক্তির অভিযাত্রী ডার্ক ওয়েব পরিচিতি ডিপ ওয়েব কি ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ সার্চ ইঞ্জিন কেন খুজে পায়না কেন ডার্কনেট ঝুকিপুর্ন Dark Web/Deep Web কি এবং কেন কিভাবে ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করবেন deep web stories documentary Projuktir AvijatriProjuktir Avijatri darkweb deepweb
ডার্ক ওয়েব – darkweb deepweb

ইন্টারনেট দুনিয়ায় Google’র মত সার্চ ইঞ্জিনের বাইরে যে বিস্তার জগত আছে আমরা বেশীর ভাগই সেই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত না।

Google, Yahoo, Bing সার্চ ইঞ্জিনের প্রভাবে হয়ত আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় সকল জিনিসই পেয়ে যাচ্ছি অনেক সহজেই। কিন্তু আমরা কি আদৌ জানি যে, এই ইন্টারনেট দুনিয়ায় অদৃশ্যমান আরও একটি জগত আছে। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, এই ইন্টারনেটের অদৃশ্যমান জগতের ব্যাপ্তি মোট ইন্টারনেট দুনিয়ার প্রায় ৯৮% জুড়ে বিদ্যমান। তাই অজানা এই জগতকে খুব কাছে থেকে জানতে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ে ফেলুন।

ইন্টারনেটের এই বিশাল জগত দুই ভাগে ভাগ বিভক্তঃ-

  • Surface Web বা দৃশ্যমান ওয়েবঃ সাধারণ ভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ওয়েবে সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে যে সকল ডাটা খুজে পায়।
  • Deep Web বা অদৃশ্য ওয়েবঃ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের যে অংশ সাধারণ ভাবে খুজে পাওয়া যায় না; ইন্টারনেট ও ওয়েবের ভেতরে সম্পূর্ণ রহস্যময় এই অংশে সবরকম বৈধ, অবৈধ তথ্য বিদ্যমান। এর ভেতরে আলাদা আরেকটি অংশ রয়েছে যাকে ‘ডার্ক ওয়েব’ বলা হয়ে থাকে।

ধারণা করা হয়, Surface Web এর তুলনায় Deep Web ৫০০ গুণ বড়।

Surface Web Vs Deep Web Vs Dark Web ডার্ক ওয়েব ডিপ ওয়েব
এক নজরে ইন্টারনেট

ডার্ক ওয়েব কী?

ডার্কনেট/ডার্ক ওয়েব হচ্ছে ডীপ ওয়েবের মধ্যে আরেকটি অংশ, যেখানে সব রকম অবৈধ কার্যকলাপ সংঘটিত হয়ে থাকে। ডার্কনেট ইন্টারনেটের এমনই এক অংশ যেখানে কোনো সার্চ ইঞ্জিন, সাধারণ ব্রাউজার এক্সেস নিতে পারে না। ডার্ক ওয়েবে নিজের পরিচয় সম্পূর্ণ ভাবে লুকিয়ে প্রবেশ করা যায় বিধায় এখানে অনাসায়েই সর্বোচ্চ অপরাধমূলক ও নিষিদ্ধ কাজ করা যায়।

অনেকে Deep Web ও Dark Web এই আলাদা ২ টি বিষয়কে একই মনে করে।

ডার্কওয়েবের কল্পকথাঃ

  • ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করা অবৈধ।
  • এখানে প্রবেশ করা অনেক ঝুকিপূর্ণ
  • আপনি যেকোনো উপায়ে হ্যাকিং এর শিকার হতে পারেন।
  • এটা শুধুমাত্র অপরাধীদের ব্যবহারের জন্য।
  • অনেক সাইটে আপনি ভীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারেন।

সার্চ ইঞ্জিন কেন খুঁজে পায় না?

Google, Yahoo, Bing এসব সার্চ ইঞ্জিন ওয়েব সাইটের লিঙ্ক সংগ্রহ করে Crawling এর মাধ্যমে। Web Crawler এক ধরণের সয়ংক্রিয় স্ক্রিপ্ট প্রোগ্রাম যা বট নামেও পরিচিত। এর কাজ হচ্ছে ওয়েব সাইটে গিয়ে ঐ পেজের সমস্ত লিঙ্ক ইন্ডেক্স করা এবং কপি করে ডেটাবেজে জমা করা।

কিন্তু ডীপ ওয়েবে ওয়েবসাইট গুলো বিশেষ ভাবে তৈরী এবং সাইটের ওয়েব সার্ভারে Sitemap.xml, Robot.txt – না থাকার কারণে বট Crawling করতে পারেনা।

এতো গোপনীয়তা!

আসলে এটি তৈরী করা হয়েছে গোপনীয়তার সাথে নিজেদের মধ্যে আন্ত-যোগাযোগ সচল রাখার জন্য। অনেক আগে কোন এক সংস্থা (হতে পারে সামরিক বাহিনি, ব্যবসায়ী, হ্যাকার অথবা অন্য কেউ) চেয়েছিল যে তাদের কার্যক্রম যেন অন্য কেউ না জানতে পারে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে নিরাপদে তথ্য আদান প্রদান করতে পারে। এমন কি চাইলেও কোন প্রসাশন যেন তাদের উপর নজরদারি করতে পারবে না … এখান থেকেই মূলত ডার্ক ওয়েব ধীরে ধীরে ডীপ ওয়েবের মধ্যে গোপন থেকে গোপনতর হয়ে গেলো।

কী আছে এই ডার্ক ওয়েবে?

ডার্ক ওয়েবের সম্পূর্ণ অংশই হচ্ছে অবৈধ, এজন্যই একে অদৃশ্য ওয়েবের জালে বন্দি করে রাখা হয়েছে।

  • ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের মতো এখানেও আছে বিভিন্ন ধরনের সাইট। রয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, উইকিপিডিয়া, ব্লগ, ইমেইল সার্ভিসের মত সাইট। কিন্তু এগুলো আলাদা ভাবে তৈরী করা। তা ছাড়া যে সব সাইট গুলোকে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেই সব সাইটও আছে। আমাদের জানা অজানা অনেক বিষয় এই ডার্ক ওয়েবে বিদ্যমান, কিন্তু সম্পূর্ণ গোপনভাবে।
  • অপরাধ জগতের প্রায় সকল প্রকার কাজ এখানে করা যায়। মাদক দ্রব্য থেকে শুরু করে ভাড়া করা কিলার(টাকার বিনিময়ে খুন করে) এখানে পাওয়া যায়। কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ কাজগুলো যেমন শিশু পর্নোগ্রাফি, পতিতা ভাড়া করা, ড্রাগ কেনা-বেচা, অস্র ক্রয়-বিক্রয় ও পাসপোর্ট যোগার, চুরি করা ক্রেডিট কার্ড নম্বরসহ ইত্যাদি অন্যান্য অবৈধ ও নিষিদ্ধ জিনিস পাওয়া যায়।
  • পাশাপাশি বিভিন্ন দামি সফটওয়্যারের ক্র্যাক, পাইরেসী বিনামূল্য পাওয়া গিয়ে থাকে।
  • ডীপ ওয়েবের কারেন্সি হল বিটকয়েন (১ বিটকয়েন = ৩,৪১,৮১৩ টাকা)। সুবিধা হচ্ছে, বিটকয়েন লেনদেনের সময় পার্সনাল আইডিন্টির প্রয়োজন নেই এবং ট্যাক্সও দিতে হয় না।

তাহলে কি ডার্ক ওয়েবে নিরাপদে অপরাধ করা যায়!

ধারনা করা হয় যে, যেই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করা হয়, তার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কোন প্রসাশনের কাছে রয়েছে। ২০১১ সালে একবার Tor এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে এটি নাকি CIA-এর একটি স্পাই নেটওয়ার্ক। তাছাড়া আপনি যদি আপনার আসল পরিচয় প্রকাশ করেন বা কোন ভাবে প্রকাশ হয়ে যায় তাহলে আপনি বিপদে পড়তে পারেন।

ডার্ক নেট – ভয়ানক ক্ষতিকর ও খুব ঝুঁকিপূর্ণ

আমরা সচরাচর যেসব সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করি, সেগুলো আমাদেরকে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের ম্যালওয়্যার,ভাইরাস এর ঝুকি থেকে নিরাপদ রাখে। কিন্তু ডার্ক ওয়েবের অধিকাংশ ওয়েব সাইটই অনিরাপদ। সেই সব সাইট আপনাকে বিভিন্নরকম সফটওয়্যার বা অ্যাপস পিসিতে ইন্সটল করার জন্য উৎসাহিত করবে, যাতে রয়েছে অত্যন্ত ক্ষতিকর ভাইরাস/ম্যালওয়ার। ডার্কনেটে এরকম ম্যালওয়্যার পাওয়া গিয়েছে যা কিনা একটি পিসিকে অকেজো করে দিতে সক্ষম।

সতর্কতাঃ ডার্কওয়েব ব্যবহার করার সময় আপনি অনেক বিপদজ্জনক সাইটে ঢুকে পড়তে পারেন।

ওয়েব ডিজাইন ও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট নিয়ে বিস্তারিত নিয়ে সম্প্রতি আমাদের প্রকাশিত “ওয়েব ডেভেলপমেন্ট: একেক ভিতর সব” প্রকাশনাটি দেখে নিতে পারেন।
১ comment
মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You May Also Like
ম্যালওয়্যার সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন
আরও পড়ুন

ম্যালওয়্যার সম্পর্কে যা জানা জরুরী

ম্যালওয়্যার! বর্তমান সময়ে আসলেই একটি ভয়ের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। বড় টেক কোম্পানী থেকে ছোট পার্সোনাল কম্পিউটার হতে স্মার্টফোন…
hacking vs hacker Projuktir Avijatri Projuktir Avijatri types of hacking what is hacking definition হ্যাকিং শিখতে হলে শিখতে চাই হ্যাকিং কি কাকে বলে হ্যাকিং শিখুন প্রতিরোধের উপায় সাইবার ক্রাইম কি কিভাবে হ্যাকার হব প্রযুক্তির অভিযাত্রি
আরও পড়ুন

ঘুরে আসি হ্যাকিং এর জগতে

হ্যাকিং শুনলেই মনের মধ্যে এক ধরণের উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। সেখান থেকেই মূলত এই লেখাটির অনুপ্রেরণা; তাই আজকে খুব…
best secure messaging apps private messenger
আরও পড়ুন

প্রাইভেট মেসেজিং : নিরাপদ হোক অনলাইনে কথাবার্তা

আপনি প্রতিদিন হাজার হাজার মেসেজ বিভিন্ন জনের কাছে পাঠাচ্ছেন, আপনাকেও অনেকে মেসেজ পাঠাচ্ছে। কিন্তু আপনার কি ধারণা আছে…