অসাধারণ ব্লগ লিখতে যে বিষয়গুলো জানা আবশ্যক

প্রযুক্তির অভিযাত্রি অসাধারণ ব্লগ লিখতে যে বিষয়গুলো জানা আবশ্যক
অসাধারণ ব্লগ লিখতে যে বিষয়গুলো জানা আবশ্যক

একটি সফল ব্লগ পোষ্ট লেখার জন্য কি কি বিষয় জানা প্রয়োজন ও এর সাথে কিছু কার্যকরী টিপস নিয়ে অভিযাত্রিদের উদ্দেশ্যে এই লেখাটি একজন সফল লেখক হতে সাহায্য করবে।

যারা নতুন লেখালিখি শুরু করছে, তাদের মধ্যে বেশীরভাগই কোনো গাইডলাইন ছাড়া এলোমেলো ভাবে ব্লগ লেখে। মাথায় একটা আইডিয়া আসলো আর ওমনি লেখা শুরু করে দিলো। যারা ফলে অসংখ্য লেখা পাওয়া যায় কিন্তু গুণগতমান সম্পন্ন লেখা খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। একটি সুন্দর ও আকর্ষনীয় ব্লগ লেখার মধ্যে যেমন অন্যরকম আনন্দ পাওয়া যায় তেমনি ভাবে এখানে শেখারও অনেক কিছু রয়েছে। নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে লেখা শুরু করার আগে ফর্মুলা মেনে চললেই কিন্তু অসাধারণ লেখা উপস্থাপন করা যায়।

তাই আজকের এই লেখায় আমি শেয়ার করবো কিভাবে লেখার ফর্মূলা মেনে পাঠকদের ভালো ব্লগ উপহার দেওয়া যায়! তার আগে জেনে নেওয়া যাক একটি আদর্শ ব্লগের কি কি অংশ রয়েছে?

 

ব্লগের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ

যেকোনো ব্লগেরই কয়েকটা পার্ট বা অংশ থাকে, যার প্রতিটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি ৭টি অংশে একটি ব্লগ পোষ্টকে ব্যবচ্ছেদ করলাম।

১। টাইটেল বা শিরোনাম ব্লগের যেই অংশটি সর্বপ্রথম পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেটি হচ্ছে শিরোনাম। এটি যত বেশী আকর্ষণীয় করে তোলা যাবে সেই ব্লগটি তত বেশী পাঠকদের পড়তে বাধ্য করবে। ব্লগের শিরোনাম যদি ৮ সেকেন্ডের মতো পাঠককে ধরে রাখতে পারে তাহলে ধরে নেওয়া যায় ব্লগ লেখা সার্থক। তাই অস্থির শিরোনাম লেখার জন্য মনোযোগ দেওয়া উচিত।

২। শুরুতে কিছু কথা বা সূচনা – শিরোনামের পরেই ব্লগের ২য় গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হচ্ছে এটি। যেহেতু শিরোনামে অনেক অল্প সময়ের মধ্যে পাঠক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সে পুরো লেখাটি পড়বে তাই এই অংশে সংক্ষিপ্তভাবে পুরো লেখাটিতে কি কি রয়েছে তা বলে দিতে হবে। বিভিন্ন উপায়ে ভুমিকা দেওয়া যেতে পারে যেমন, গল্প-আকারে, কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে, বর্তমান সময়ের কোনো ঘটনার উল্লেখ করে অথবা কৌতুক দিয়েও শুরু করা যেতে পারে।

যেভাবেই শুরু হোক না কেনো মনে রাখতে হবে এই অংশ পড়ার সময় যাতে পাঠককের আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং সে সামনে অগ্রসর হয়। আমি এখানে সাজেস্ট করবো লেখক এই অংশে এমন কিছু মজার, চমকপ্রদ তথ্য দিবে যা টপিক রিসার্চের সময় তার ভালো লেগেছে।

৩। মূল লেখা – এখানে বিশদ আকারে লিখার ক্ষেত্রে মনে রাখার বিষয় হচ্ছে, লিস্ট-বুলেট আকারে, নাম্বার দিয়ে সাজিয়ে, উদ্ধৃতি দিয়ে লেখাকে সহজ ও সাবলিল ভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে পাঠকের বিষয়টি বুঝতে ও মনে রাখতে সুবিধা হয়।

৪। উপ-শিরোনাম বা সাবটাইটেল – কনটেন্ট সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা দেওয়া ও লেখার গঠনকে পাঠকের সামনে তুলে ধরার জন্য সাবটাইটেলের গুরুত্ব রয়েছে। এটি এমন ভাবে কনটেন্টে যোগ করতে হবে যাতে যে কেউ পুরো লেখাটিতে একবার নজর রাখলেই বুঝতে পারে, কি কি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

৫। প্রাসঙ্গিক ছবি – অসংখ্য লেখাকে একটি ছবির মধ্য দিয়ে প্রকাশ করা যায়। তারমধ্যে সেই ছবিতে যদি অল্প কিছু লিখে (ক্যাপশন) দেওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই। পাঠকদের দ্রুত বোঝার সুবিধার্থে, ছবির ক্যাপশন গুলো অবশ্যই শিরোনাম, উপ-শিরোনামের মতো আকর্ষনীয় করে তুলতে হবে।

৬। ফিচার ইমেজ – ব্লগের লেখাটি কি বিষয়ে তারই একটি প্রতিফলন হচ্ছে ফিচার ইমেজ, এটি ব্লগে পাঠকদের নিয়ে আসতে একটি অর্থবহ ভূমিকা রাখে।

৭। শেষকথা – পরিশেষে পুরো ব্লগে যেসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে তার একটি সংক্ষিপ্ত উপসংহার উপস্থাপন করতে হবে। এই অংশে চাইলে লেখায় ব্যবহৃত বিভিন্ন রিসোর্স, লিঙ্ক দেওয়া যেতে পারে।

 

অসাধারণ ব্লগ লেখার সাধারণ কিছু টিপস্

লেখা শুরু করার আগে আমি কিছু বিষয় মাথায় রেখে লিখি, তার মধ্যে কিছু টিপস আপনাদের উন্নত লেখা প্রকাশ করতে কাজে আসবে বলে আমি মনে করি।

১। আইডিয়া বা টপিক নির্বাচন – লেখা শুরু করার আগে এই বিষয়টিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আইডিয়া বের করার ক্ষেত্রে আমি শুধু বলবো, এমন টপিক বাছাই করবেন যে বিষয়ে আপনি ভালো জানেন এবং অন্যদেরকে ভালো ভাবে বোঝাতে পারবেন বলে মনে করেন।

১। রিসার্চ – আপনি যেই বিষয় নিয়েই লিখুন না কেনো, সবসময় চেষ্টা করবেন, যেই বিষয়টি নিয়ে লিখতে যাচ্ছেন সেটির অনেক গভীরে যাওয়ার। অধিকাংশ লেখকই টপিক নির্বাচন করার পর সেই বিষয়ে গুগলিং করে যতটুকু সম্ভব অন্যান্য লেখা পড়ে থাকে। সংগ্রহ করা রিসোর্স গুলোকে একটি লিস্ট আকারে তৈরী করা যেতে পারে।

২। প্ল্যান – এখন লেখাটির একটি স্ট্রাকচার তৈরী করার সময়। এসময় আমি প্ল্যানিং করে পুরো ব্লগটার একটি গঠন প্রস্তুত করি। যেখানে লেখাটির কনটেন্ট আমার মাথায় থাকে আর সেই অনুযায়ী শিরোনাম, উপ-শিরোনাম ও অন্যান্য বিষয়সমূহ নির্দিষ্ট করে ফেলি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এখন যে লেখাটি পড়ছেন তার মূল পয়েন্ট গুলো আমি প্ল্যানিং করার সময় তৈরী করেছি।

৩। লক্ষ্য – ব্লগের টপিকের উপর ভিত্তি করে লেখাটি কতো শব্দের মধ্যে শেষ করা যায় সেটি নির্ধারণ করা। সাধারণত অনলাইন পাঠকরা ১০০০-২০০০ শব্দের লেখা পড়তে বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

৪। পরিসংখ্যান যোগ করা – যতটুকু সম্ভব বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে লেখাটি পূর্ণাঙ্গ করা। বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও অনুমোদিত তথ্য যোগ করলে লেখাটিকে অনেক প্রাণবন্ত মনে হবে, যেটি পাঠকের কাছে ভালো লাগা তৈরী করবে।

৫। সম্পৃক্ত লেখা যুক্ত করা – যতটুকু সম্ভব অন্যান্য পোষ্টের সাথে যোগসূত্র তৈরী করা। এর মানে এই না যে পাঠককে ব্লগের অন্য লেখা পড়তে উৎসাহিত করছেন। বরং অন্য লেখা সংযোগ করলে ঐ বিষয়ে নতুন করে বিস্তারিত আর বলতে হয়না। অতিরিক্ত লেখা সাশ্রয় হয়।

 

পরিশেষে,

আমি ব্লগ লিখতে গেলে ঠিক কি কি চিন্তা করি, তার সবকিছু এখানে বলা সম্ভব হয়নি। আশাকরি উপরের লেখাটিতে আপনি ব্লগ লেখা নিয়ে একটি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। নতুন ব্লগ শুরু করার ক্ষেত্রে “ব্লগের গুরুত্বপূর্ণ অংশ” যোগ করতে ভুলবেন না আর টিপস গুলো মাথায় রাখলে আপনিও একটি সুন্দর ব্লগ উপহার দিতে পারবেন।

৪ comments
  1. খুব সুন্দর করে করে গুছিয়ে লিখেছেন। ব্লগলিখতে অবশ্যকিয় বিষয় সম্পর্কে অনেক জানা হল। আশা করি আগামীতে আরো ভাল ভাল লেখা পাব। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।