‘ক্রিপ্টোকারেন্সি’ নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রকাশনার প্রথম দিকে আমরা আলোচনা করবো – সচরাচর যে প্রশ্ন গুলো সবার নজরে আসে এবং যেগুলো সবাই জানতে চায়। আশাকরি সবাই পুরোটা সময় আমাদের সাথেই থাকবেন।

ক্রিপ্টোকারেন্সি কি সেটা বোঝার জন্য আমাদের আগে জানতে হবে এই দুটি শব্দ (ক্রিপ্টো + কারেন্সি) দিয়ে কি বোঝায়।

ক্রিপ্টোগ্রাফি – ল্যাটিন শব্দ ক্রিপ্টোস (kryptos) এর অর্থ হচ্ছে ‘লুকানো’, অন্যদিকে গ্রাফি (Grapy) শব্দটি ফরাসি ও জার্মানি শব্দ ‘graphie’ থেকে এসেছে যার অর্থ দাড়ায় ‘লেখার প্রক্রিয়া’। মধ্যযুগে মূল্যবান কিছু জিনিশকে মাটির নিচে লুকাতে এই শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়। আসলে ক্রিপ্টোগ্রাফি হচ্ছে লেখার একটি ধরণ যেখানে লুকানো অনেক কিছুই থাকে।
ক্রিপ্টোগ্রাফি মূলত কোড লেখার মতো‌ই একটি আধুনিক শিল্প যা ডিকোড (Decode) করলে অর্থপূর্ণ ফলাফল পাওয়া যায়। এটির প্রথম ব্যবহার শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় যখন রেডিওর মাধ্যমে সংবাদ সিগনালে পাঠানো হতো এবং তা ব্যর্থ হতো কারন তখন ডিক্রিপ্ট করার পদ্ধতি জানা ছিল না।

কারেন্সি: ক্রিপ্টোকারেন্সির দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে কারেন্সি। এটি মূলত একধরনের টোকেন যার নির্দিষ্ট একটি মূল্য রয়েছে যা দিয়ে পণ্য বা সার্ভিস কেনা যায়। মুদ্রা তৈরী হওয়ার আগে এমন এক ব্যবস্থা ছিলো যেখানে পণ্যের পরিবর্তে পণ্য পাওয়া যেতো। মুদ্রা ব্যবস্থা স্থিতিশীল একটি অর্থনৈতিক সিস্টেম বা কাঠামো গঠন করে। প্রচলিত লেনদেন ব্যবস্থায় মুদ্রা এবং নোট খুবই সাধারণ একটা পদ্ধতি। তাছাড়া ব্যাংকের চেক, মানি-অর্ডারসহ বিভিন্ন রকম কাগজ, মুদ্রা হিসেবে প্রচলিত। এদিক থেকে বলা যায়, ক্রিপ্টোকারেন্সি মুদ্রা ব্যবস্থাকে ডিজিটাল দিক থেকে অনেক অগ্রসর করে তুলেছে।

এতোক্ষণ ধরে আমরা ক্রিপ্টো ও কারেন্সির মানে বুঝলাম। এদেরকে একসাথে করলে যা দাড়ায় – ক্রিপ্টোকারেন্সি হচ্ছে নিরাপদ ও লুকায়িত মুদ্রা ব্যবস্থা, প্রচলিত মুদ্রার মতোই যার আর্থিক মূল্য রয়েছে। বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, লাইটকয়েন ও অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলো একই ছাতার নিচে অবস্থান করছে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ এর বেশী ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে এবং দিনে দিনে তা বাড়ছেই।

ক্রিপ্টোকারেন্সির উদ্ভাবন –

যুগের পর যুগ ধরে মানুষ মুদ্রা ব্যবস্থার উন্নতি খুজছে যেটা ভবিষ্যতে আমাদের অর্থনীতিকে পরিচালনা করবে। যাইহোক মানুষ প্রথম এই বিষয়ে সফলতার ছোয়া পায় যখন তারা বিটকয়েন(২০০৮ সালে)-এর আবিষ্কারক Satoshi Nakamoto সম্পর্কে জানে। এটা ছিল প্রথম স্থায়ী ও সফল ক্রিপ্টোকারেন্সি যেটা ২০০৯ সালে ভালভাবে প্রকাশ পায়। তখন থেকেই প্রায় ১০০০ ক্রিপ্টোকারেন্সি আবিষ্কার হয়। একারনেই এই সকল মুদ্রাগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিশাল বানিজ্য ক্ষেত্র হবে বলে আশা করা যায়। আর আমরা এমন একটি কারেন্সি নিয়ে গবেষনা করছি যেটার একটি স্থায়ী ভবিষ্যৎ রয়েছে। 

অনেক বছর ধরে সাতোশি নাকামোতো কে চিহ্নিত করার ব্যাপক প্রচেষ্টা চলছে কিন্তু সবাই ব্যর্থ হয়েছে। এই মানুষটি কে তা এখন পর্যন্ত জানা যায় নি। আর এই অজানা মানুষ ( অথবা হতে পারে কোনো টিম) ই ক্রিপ্টোকারেন্সি নামক ডিজিটাল বিপ্লব ঘটানোর পেছনে দায়ী। সম্প্রতি NSA একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যেখানে “সাতোশি”র লেখার প্যাটার্ণ থেকে ৫০ টি ব্যবহৃত শব্দ ছিলো, যা দিয়ে সাতোশি নাকামোতো’কে চিহ্নিত করা যায়। গবেষণায় ‘Stylometry’ পদ্ধতিতে এটা বের করা হয়।

মানুষ কেনো ক্রিপ্টোকারেন্সিতে আকৃষ্ট হচ্ছে?

ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি জনপ্রিয় বিষয়। এটা শুধু কেবল একটি ভিন্ন মুদ্রানীতি নয়, বরং এটি আমাদেরকে সরকারের থাবা থেকেও মুক্ত করে দেয়। এই অর্থ সরকারী নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাংক চার্জ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। এটি দ্রুততর, আরো সুরক্ষিত এবং এটি কখনোই চুরি বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না এবং যে কোনো অঙ্কে এটাকে ভাগ করা যায়। 

ক্রিপ্টোকারেন্সির আরও একটি সুবিধা হচ্ছে এটি উচ্চমানের নিরাপত্তার সাথে ডিজিটাল অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। আরও মজার বিষয় এই সিস্টেমের মাধ্যমে লেনদেন ব্যবস্থাপনায় কোন প্রকার নকল বা প্রতারণার শিকার হতে হয় না। এছাড়াও এই লেনদেন ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকিং কাঠামো বা সিস্টেমের চেয়ে কম টাকা লাগে। 

মানুষের ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনার অন্যতম প্রধান আকর্ষন হলো এটি বাজারে ক্রমান্বয়ে পরিবর্তনশীল। যদিও এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। যাই হোক এই সময়ের বাজারে এটি খুব লাভজনক এবং তাই বিনিয়োগকারীদের এখানে বিনিয়োগ করতে আকর্ষণ করে। 

ক্রিপ্টোকারেন্সি ঘিরে যতো সমালোচনা –

প্রতিনিয়তই চারিদিকে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে গুঞ্জন উঠছে এবং বহির্বিশ্বে নিত্যদিনকার একটি আলোচনায় পরিণত হয়েছে। বাহিরে যতোই ভালো দেখাক না কেনো ভিতরে ভিতরে কিন্তু বিষয়টা অনেক গভীরে গিয়ে চলে গিয়েছে। চারপাশে যেসব বিষয়ে কথা উঠেছে তার কিছুটা নিচে উল্লেখ করা হলো –

অবৈধ আর্থিক কার্যকলাপ: যদি কেউ অর্থ নিয়ে অবৈধভাবে কোনো কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে তার প্রথম পছন্দ হয় ক্রিপ্টোকারেন্সি। কারণ এখানে লেনদেন ট্র্যাক করা সম্ভব হয় না। আর জানাই বা সম্ভব হবে কি করে যেখানে নাম, ঠিকানা ছাড়া এড্রেস পাওয়া যায়। কোথা থেকে আসছে তাও জানা সম্ভব নয়। ড্রাগ, অস্ত্র বা ডার্ক ওয়েবে অবৈধ কিছু কেনার ক্ষেত্রে ক্রিপ্টোকারেন্সি সবারই প্রথম পছন্দ হয়ে থাকে।

হ্যাকিং: ক্রিপ্টোকারেন্সি যেখানে প্রতারনা মুক্ত সেখানে এটির হ্যাকারদের কবলে পড়ার ঝুকি বেশি। আমার ওয়ালেট বা একাউন্ট টি যদি কোন থার্ডপার্টি সার্ভারে ডাটা রাখে এবং সেই সার্ভার থেকে ডাটা চুরি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। সামনে এই বিষয়টি নিয়ে আমরা আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো।

দামের ওঠানামা: ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করা সবসময়ই ঝুকিপূর্ণ কারণ এখানে মার্কেটের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় ০ ডলার থেকে ১০০০ ডলার এর দাম পৌছাতে কতো সময় লেগেছিলো, কিন্ত মাত্র কয়েক মাসের মাথায় এর দাম (৯০০ থেকে ৭৫০০ ডলার পর্যন্ত) আকাশচুম্বী হয়ে যায়। যদিও বাইরে থেকে এর লাভ অনেক বেশী মনে হয় কিন্তু যদি আপনার টাকা হারাতে ইচ্ছা হয় তাহলে এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন।

জনপ্রিয় কিছু ক্রিপ্টোকারেন্সি

ইতিমধ্যে আমরা জেনে গেছি ক্রিপ্টোকারেন্সি কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক জনপ্রিয় চারটি ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে। 

বিটকয়েন:  ডিজিটাল কারেন্সিগুলোর মধ্যে বিটকয়েন ২০০৯ সালে আবিষ্কৃত হওয়া সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং প্রথম ডিজিটাল মুদ্রা । বিটকেয়েন জন্য অবিস্মরনীয় বছর হিসাবে ধরা হয় ২০১৭ সালকে কেননা এসময় এর লক্ষমাত্রা $৭৫০০ ডলার ছাড়িয়ে যায় যা বর্তমানে $৬৩৩২ ডলার এবং ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধিপাবে বলে ধারনা করা হয়। 

বিটকয়েন নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে (ডিজিটাল মুদ্রার অপর নাম ‘বিটকয়েন’) এই লেখাটি দেখতে পারেন।

ইথেরিয়াম: এটি কিছুটা বিটকয়েনের মত হলেও এর প্রায় সব কিছু নিয়ন্ত্রিত হয় ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে। যার বর্তমান বাজার মূল্য $৩২৫ ডলার।

রিপলঃ এটি একটি ডিজিটাল মুদ্রা হলেও ব্যাংকের সাথে লেনদেন করার জন্য এটি বহুল ব্যবহৃত ডিজিটাল কারেন্সি। এজন্যই অল্প সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে লেনদেন করার জন্য রিপল খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
লাইট কয়েন: এটি আরেকটি জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি যা মোটামুটি বিটকয়েনের মত, কিন্তু অনেক দ্রুত। বর্তমানে এর বাজারমূল্য প্রায় $৬০ ডলারের মতো।

ক্রিপ্টোকারেন্সি’র মূল্য কতো!

১০০০ এর ও বেশী ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্যে এর আসল মূল্য কতোটুকু! এটা জানা যায় সবচেয়ে শক্তিশালী ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের দিকে তাকালে – 

  • বিটকয়েনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে প্রথম অবস্থায় যার মূল্য ছিল $০ ডলার
  • ২০১০ সালের শেষ দিকে এসেও বিটকয়েনের মূল্য ১ ডলার আসে নি তবে তৎকালিন এর বাজার মূল্য ছিল ০.৩৯ ডলার।
  • বিটকয়েনের মূল্য ২০১১ সালে $২৯.৫৮ ডলারে দাড়ায়।
  • ২০১২ সালে বিটকয়েনের মূল্য দাড়ায় $২১০ ডলারে।
  • ২০১৪ সালে বিটকয়েনের সর্বোচ্চ মূল্য দাড়ায় $৯৮৫ ডলার।
  • ২০১৫ সালে হটাৎ বিটকয়েনের দাম কমে যায় তখন এর বাজার দর $২১৯ এবং $৪৬১ ডলারের মাঝামাঝি ছিলো।
  • বিটকয়েন ২০১৬ সালে $৯৫০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
  • ২০১৭ সাল বিটকয়েনের জন্য একটি সেরা বছর কারন $৯৫০ ডলার দিয়ে শুরু করলেও ২ সেপ্টেম্বর এটি $৪,৭৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
  • মার্চ ২০১৭ সালে বিটকয়েন স্বর্ণের মূল্যকে ছাড়িয়ে যায়। তখন ১ ট্রয় আউন্স (Troy Ounce) স্বর্ণের মূল্য ছিল $১২৩৩ ডলার এবং ১ বিটকয়েনের মূল্য ছিল $১২৬৮ ডলার। এজন্য তখন বিটকয়েনকে ‘Digital Gold’ নাম দেওয়া হয়।

সবশেষে এটা বলা যায় আধুনিক যুগে ক্রিপ্টোকারেন্সি আমাদের অর্থনৈতিক সিস্টেমকে ভিন্নভাবে পরিবর্তন করে ফেলছে। যা কিনা পুরোটাই প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে! ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে আজকে একটি অন্যরকম ধারণা পেলেন। পরবর্তী লেখায় আমরা ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করবো।

এই লেখাটি সম্পাদনা করা হয়েছে আগস্ট ১২, ২০১৮ ১১:৪৬ অপরাহ্ন

নাজির আহমেদ সাব্বির

প্রযুক্তির অভিযাত্রি ও অভিযাত্রিদের নিয়ে পথচলার ৩ বছর পূর্ণ হলো। ইতিমধ্যে আমরা বাংলায় প্রযুক্তি বিষয়ক তিনটি পূর্নাঙ্গ ই-ম্যাগাজিন সবার সামনে উপস্থাপন করেছি। টিম প্রযুক্তির অভিযাত্রি মানসম্মত কনটেন্ট তৈরীর পাশাপাশি বাংলা ভাষাকে ওয়েবে সমৃদ্ধ করতে প্রতি নিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।

শেয়ার করুন

সর্বশেষ প্রকাশনা

orologi replica

orologi replica montres repliques replica watches

জুন ১০, ২০২৫

replica Hublot watches

replica Hublot watches .iwc replica uk UK automatic cheap replica watches for men here are at affordable…

জুন ১০, ২০২৫

rolex replica

Our AAA Best Breitling Replica Watches Online Store offer cheap Swiss Breitling Replica with top quality, 60…

জুন ১০, ২০২৫

replica watches uk

replica watches uk If you like forever classic fake watches, you cannot miss the uk…

জুন ১০, ২০২৫

Breitling Navitimer replica

Fast shipping and quality guarantee. Ordering UK cheap replica rolex watches from our online shop is a…

জুন ১০, ২০২৫

TAG Heuer replica

best replica watches uk TAG Heuer replica replica watches

জুন ১০, ২০২৫