নেটওয়ার্কিং বেসিকস

নেটওয়ার্কিং বেসিকস

অনেকেরই ধারণা ইন্টারনেট মানে একটি ম্যাজিকেল ক্লাউড যা আমাদের পছন্দের ওয়েবসাইট, অনলাইন শপ এবং অন্তহীন বিনোদনের স্ট্রিমগুলো অ্যাক্সেস করতে দেয়। কিন্তু আসলে এখানে কোনো ম্যাজিক নেই, নেই কোনো রহস্যময় বিষয় যা আমাদের অনলাইন রিসোর্সগুলো অ্যাক্সেস করতে দেয়।

ইন্টারনেট হচ্ছে বিশ্বের সকল কম্পিউটারগুলোর আন্তঃসংযোগ, বলতে পারেন এটি বিশাল আকৃতির একটি মাকড়সার জাল যা আমাদের সকলকে একত্রিত করে থাকে। আর এই অভ্যন্তরীণ সংযোগটি একটি নেটওয়ার্ক হিসেবে পরিচিত।

একই নেটওয়ার্কে থাকা কম্পিউটারগুলো একে অপরের সাথে ডেটা আদান-প্রদান করতে পারে। মাত্র দুটি কম্পিউটারের সংযোগে একটি সাধারণ নেটওয়ার্ক তৈরি করা সম্ভব। আবার আপনার বাসার সকল ডিভাইসের অভ্যন্তরীণ সংযোগেও একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা সম্ভব।

কিন্তু স্কুল অথবা কর্মস্থানের সকল কম্পিউটারগুলোকেও কি একটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করা সম্ভব? হ্যাঁ, অবশ্যই। পৃথিবীর সকল কম্পিউটারগুলোকে একটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করা সম্ভব। এই অসংখ্য কম্পিউটারের সংযোগে তৈরি হওয়া বিশাল আকৃতির নেটওয়ার্কই আমাদের কাছে ইন্টারনেট নামে পরিচিত।

কিভাবে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস পাওয়া যায়?

অধিকাংশ মানুষ মজিলা ফায়ারফক্স (Mozilla Firefox), গুগল ক্রোম (Google Chrome) এবং মাইক্রোসফট এজ (Microsoft Edge) এর মতো বিভিন্ন ব্রাউজারের মাধ্যমে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করে থাকে।

আর ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (World Wide Web) এর মাধ্যমে এটি সম্ভব হয়। তবে ইন্টারনেটকে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ভাবা ভুল হবে, ইন্টারনেট এবং ওয়েব দুটি ভিন্ন জিনিস। ইন্টারনেট হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন কম্পিউটার এবং তারের মধ্যে ফিজিক্যাল কানেকশন। আর ইন্টারনেটে থাকা ইনফরমেশনগুলো হচ্ছে ওয়েব

এটি ব্যবহার করে www.projuktiravijatri.com এর মতো ডোমেইনের মাধ্যমে ইন্টারনেটের অ্যাক্সেস পেয়ে থাকি। কিন্তু ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করার একমাত্র মাধ্যম নয়। ই-মেইল করা, বন্ধুদের সাথে চ্যাট, এবং ফাইল-শেয়ারের মাধ্যমেও ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করা সম্ভব।

একজন গ্রাহক কিভাবে ইন্টারনেট থেকে তথ্য পেয়ে থাকে?

ইন্টারনেট স্যাটেলাইট, সেলুলার নেটওয়ার্ক এবং মাটির নিচে সমাহিত ফাইবার ক্যাবলের বিশাল নেটওয়ার্কের সমন্বয়। প্রকৃতপক্ষে, আমরা সরাসরি ইন্টারনেটের সাথে সংযোগ স্থাপন করি না। সার্ভার নামের কম্পিউটারগুলো ইন্টারনেটের সাথে সরাসরি সংযুক্ত থাকে।

সার্ভার আমাদের ব্যবহারকৃত ওয়েবসাইটগুলো যেমন (Wikipedia, Google, Reddit, এবং BBC ইত্যাদি) এদের ডেটা স্টোর করে রাখে। যার ফলে আমরা আমাদের পছন্দের কন্টেন্ট অ্যাক্সেস করতে পারি।

আমরা যেসব ডিভাইস ব্যবহার করে থাকি যেমন- মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, গেইম কনসোল ইত্যাদি এগুলোকে ক্লায়েন্ট ডিভাইস বলা হয়। এসকল ডিভাইস বিভিন্ন তথ্য, ছবি এবং ভিডিও কনটেন্ট পাওয়ার জন্য সার্ভারের কাছে রিকোয়েস্ট করে থাকে।

ক্লায়েন্টরা সরাসরি ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হওয়ার পরিবর্তে বিভিন্ন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP) এর মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। আইএসপি (ISP) নেটওয়ার্ক তৈরি করে এবং সকল প্রয়োজনীয় ক্যাবলিংয়ের কাজ করে যা লক্ষ লক্ষ কম্পিউটারকে একটি সুবিশাল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করে থাকে।

এগুলো অন্যান্য নেটওয়ার্ক এবং আইএসপির সাথেও সংযুক্ত থাকে। মূলত, পৃথিবীর অন্যান্য সকল নেটওয়ার্কগুলো একত্রে সংযুক্ত হয়ে ইন্টারনেট নামের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করে থাকে।

ক্লায়েন্ট ডিভাইস যেভাবে সার্ভারগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে থাকে: 

এক্ষেত্রে ভেবে দেখুন, আপনি যদি কাউকে একটি চিঠি পাঠাতে চান তবে তা কিভাবে পাঠাবেন? আপনি অবশ্যই চিঠিটিতে আপনার অ্যাড্রেস লিখবেন এবং যাকে পাঠাবেন তার অ্যাড্রেসে চিঠিটি পাঠিয়ে দিবেন। তেমনি কম্পিউটারগুলোর আমাদের বাসা বাড়ির মতো একটি ইউনিক আইডেন্টিফায়ার থাকে যা আইপি অ্যাড্রেস (IP address) নামে পরিচিত। এই আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে বিশ্বের সকল কম্পিউটার একে অন্যকে সনাক্ত করতে পারে।

এখানে আইপি এড্রেস ঠিকানা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত ডিভাইসগুলো অন্য আরেকটি ফিজিক্যাল অ্যাড্রেস রয়েছে যাকে ম্যাক অ্যাড্রেস (MAC address) বলা হয়। ম্যাক অ্যাড্রেসগুলো সাধারণত ডিভাইসে স্থায়ী এবং হার্ড-কোডেড হয়। কোনো নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেটা সেন্ড বা রিসিভ করার জন্য আইপি অ্যাড্রেস এবং ম্যাক অ্যাড্রেস উভয়ই থাকা প্রয়োজন।

আমরা যখন কোনো ডেটা সেন্ড করি তখন সেগুলো প্যাকেটে বিভক্ত করে সেন্ড করা হয়। প্যাকেটগুলো যখন তার গন্তব্যে পৌঁছে যায়, তখন পূর্ণরায় নিজেদের অর্ডারকে রিএ্যারেঞ্জ করে ফেলে।

নেটওয়ার্ক সম্পর্কে তো অনেক কথা হলো, এখন এই নেটওয়ার্কগুলো কীভাবে একসাথে সংযুক্ত হয়ে থাকে সেই সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। 

বিভিন্ন ধরণের নেটওয়ার্কিং হার্ডওয়্যার

কম্পিউটারগুলোকে একটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করার অনেক উপায় রয়েছে, আমরা এখানে কয়েকটি প্রধান উপায় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। 

ইথারনেট ক্যাবল (Ethernet cable) যা আপনাকে একটি ক্যাবলের মাধ্যমে নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হতে দেয়। আপনার কম্পিউটারের সিপিউ’তে একটি নেটওয়ার্ক পোর্ট থাকে সেখানে ইথারনেট ক্যাবলটি সংযুক্ত করতে পারেন। 

ওয়াই-ফাই (Wi-Fi) এটি একটি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং। রেডিও এবং অ্যান্টেনার মাধ্যমে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা হয়। আমাদের মোবাইল ফোন, স্মার্ট টেলিভিশন এবং ল্যাপটপের মতো বেশিরভাগ আধুনিক কম্পিউটিং সিস্টেমে ওয়্যারলেস ক্ষমতা রয়েছে। 

ইন্টারনেট ইকুইপমেন্ট ও ক্যাবল

ফাইবার অপটিক ক্যাবল নেটওয়ার্কের সাথে সংযোগ স্থাপনের সবচেয়ে শক্তিশালি পদ্ধতি হচ্ছে ফাইবার অপটিক ক্যাবল। এটি অবশ্য ব্যয়বহুল পদ্ধতি, কেননা ফাইবার অপটিক ক্যাবলগুলো অন্যান্য সকল পদ্ধতির তুলনায় বেশি দ্রুতগতি সম্পন্ন। এই ক্যাবলে কাচের ফাইবার থাকে যা বিদ্যুতের পরিবর্তে আলোর মাধ্যমে ডেটা সরবরাহ করে।

রাউটার (Router) কম্পিউটারকে একসাথে সংযুক্ত করার জন্য অসংখ্য ক্যাবল সংযুক্ত করতে হয় না। বরং, কম্পিউটারগুলোকে কয়েকটি আলাদা আলাদা ডিভাইসে সংযুক্ত করা হয়। আমাদের কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত প্রথম ডিভাইসটি হচ্ছে একটি রাউটার।

একটি রাউটার অনেক ভিন্ন ভিন্ন ডিভাইস একসাথে সংযুক্ত করে এবং নেটওয়ার্ক ট্র্যাফিককে রাউট করতে সাহায্য করে। ধরুন, একই নেটওয়ার্কের একটি রাউটারের মাধ্যমে আমাদের চারটি কম্পিউটার, এ, বি, সি এবং ডি একত্রে সংযুক্ত আছে।

যদি আমরা কম্পিউটার “এ” থেকে কম্পিউটার “বি” তে কোনো ফাইল পাঠাতে চাই। এক্ষেত্রে আমাদের প্যাকেটগুলো রাউটারের মধ্যে দিয়ে যায় এবং প্যাকেটগুলো কোথায় সেন্ড করতে হবে তা নির্ধারণের জন্য রাউটার নেটওয়ার্ক প্রোটোকল ব্যবহার করে প্যাকেটগুলো গন্তব্য স্থানে পৌছে দেয়। 

কিন্তু এখন যদি আমরা প্যাকেটগুলো একই নেটওয়ার্কে থাকা কম্পিউটারে না পাঠিয়ে পুরোপুরি আলাদা কোনো নেটওয়ার্কে পাঠাতে চাই? এটি কীভাবে পরিচালনা করতে হয় তাও রাউটার জানে।

প্যাকেটগুলো আমাদের আইএসপির (ISP) নেটওয়ার্কে রাউট করা অন্য আরেকটি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবে। এটি নেটওয়ার্কিং প্রোটোকল ব্যবহার করে কম্পিউটার কোথায় তা নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়, আমাদের প্যাকেটগুলো ভিন্ন ভিন্ন রাউটার, সুইচ এবং হাবগুলোতে ট্রাভেল করে। 

হাব (Hub) কি?

হাব (hub) সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল, স্বল্প বুদ্ধিমান এবং জটিল একটি হার্ডওয়্যার। এটির কাজ খুবই সহজ: একটি পোর্টে যা কিছু আসে তা অন্য পোর্টে পাঠিয়ে দেওয়া। এটি একটি নেটওয়ার্কের সকল ডিভাইসের সাধারণ সংযোগ কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে। যখন কোনো প্যাকেট একটি পোর্টে আসে, অন্যান্য পোর্টগুলোতে তা কপি হয়ে যায়, ফলে একই নেটওয়ার্কের সকল ডিভাইসগুলো সেই প্যাকেট অ্যাক্সেস করতে পারে। 

সুইচ (Switch) কি?

সুইচকে (switch) হাবের উন্নত ভার্সন বলা যেতে পারে। এটি হাব যা করে তাই করে তবে অধিক দক্ষতার সাথে। 
এটি একই নেটওয়ার্কের সকল ডিভাইসের ম্যাক অ্যাড্রেস এবং কোন কম্পিউটারগুলো কোন পোর্টের সাথে সংযুক্ত রয়েছে তা জানে, ফলে একই নেওয়ার্কের প্রত্যেকটি ডিভাইসকে সনাক্ত করতে পারে এবং সঠিক ডিভাইসে প্যাকেট ডেলিভারী করতে সক্ষম হয়। 

একটি নেটওয়ার্ক স্ট্যাক একটি হার্ডওয়্যার বা সফ্টওয়্যার সেট যা একটি কম্পিউটারের জন্য অবকাঠামো সরবরাহ করে। একইভাবে, প্রোটোকল স্ট্যাকও রয়েছে। নেটওয়ার্ক স্ট্যাক হচ্ছে সে সকল কম্পোনেন্ট যেগুলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং করে। 

OSI মডেল

ইন্টারনেট কোন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে পরিচালিত হয়?

আমাদের প্যাকেটগুলো এক গন্তব্য স্থান থেকে অন্য গন্তব্য স্থানে পৌছাতে ডিভাইসগুলো নেটওয়ার্কিং প্রোটোকল ব্যবহার করে। নেটওয়ার্ক প্রোটোকল গুলো কোনো নেটওয়ার্কে ডেটা স্থানান্তর করার জন্য কিছু রুলস ফলো করে, যা আমাদের প্যাকেটগুলো কোনো রকম করাপশন ছাড়া, সুরক্ষিত অবস্থায় সঠিক ডিভাইসে পৌছাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করে

এদের মধ্যে দুটি এমন প্রোটোকল রয়েছে যা সম্পর্কে না জানলেই নয়- ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রোটোকল (Transmission Control Protocol) এবং ইন্টারনেট প্রোটোকল (Internet Protocol) সংক্ষেপে টিসিপি/আইপি (TCP/IP), যা এখন ইন্টারনেটের প্রধান প্রোটোকল হয়ে উঠেছে।

ইন্টারনেট প্রোটোকল (Internet Protocol) বা আইপি (IP), আমাদের প্যাকেটগুলি সঠিক কম্পিউটারগুলোতে পৌছে দেওয়ার জন্য আইপি অ্যাড্রেস সরবরাহ করে।  

ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রোটোকল (Transmission Control Protocol) বা টিসিপি (TCP), একটি কানেকশন-ওরিয়েন্টেড প্রোটোকল অর্থাৎ এটি ডেটা আদান-প্রদান করার সময় সেন্ডার এবং রিসিভার টিসিপি পরস্পরের সাথে একটি লজিক্যাল কানেকশন বিল্ড করে। যাকে থ্রী-ওয়ে হ্যান্ডশেকিং বলা হয়।

ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রোটোকল ইরর কন্ট্রোল ম্যাকানিজম ব্যবহার করে, তাই যখন কোনো সেগমেন্ট অর্থাৎ প্যাকেট লস্ট হয় বা করাপ্টাডেট হয় এটি করাপ্টেড ডেটাগুলো পূর্নরায় সেন্ড করে। 

ওয়েব কি? 

ইন্টারনেট ব্যবহার করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে, তা আমরা সকলেই জানি। ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করার একটি প্রচলিত উপায় হচ্ছে ওয়েব। ওয়েবের মাধ্যমে সকল ওয়েবসাইটগুলো অ্যাক্সেস করা যায়।

ওয়েবসাইটগুলি মূলত টেক্সট ডকুমেন্ট যা এইচটিএমএল (HTML), বা হাইপারটেক্সট মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ (Hypertext Markup Language) দিয়ে তৈরি। এটি ওয়েবসাইটগুলির স্ট্রাকচার ডিজাইন করার জন্য ব্যবহৃত একটি ল্যাঙ্গুয়েজ।

ওয়েব পেইজগুলো সাধারণত খুব বেসিক কম্পোনেন্ট দিয়ে গঠিত। এখানে টেক্সট, ইমেজ, অডিও এবং ভিডিওর মতো মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট থাকে। আপনি যখন কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করতে চান, আপনাকে www.projuktiravijatri.com এর মতো একটি URL টাইপ করতে হবে।

একটি ইউআরএল (URL) বা ইউনিফর্ম রিসোর্স লোকেটর (Uniform Resource Locator), যা একটি বাড়ির অ্যাড্রেসের মতো একটি ওয়েবের অ্যাড্রেস। এখানে ইউআরএল এর www বলতে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (World Wide Web) বোঝায়। পরবর্তি অংশ projuktiravijatri.com, যাকে ডোমেইন বলা হয়। 

যে কেউ চাইলে ডোমেইন নাম রেজিস্টার করতে পারে। নাম নেওয়ার পরে এটি আইসিএএনএন (ICANN) -এ রেজিস্টার করা হয়। আইসিএএনএন (ICANN) এর ফুল-ফর্ম হচ্ছে ইন্টারনেট কর্পোরেশন অ্যাসাইনড নেইম এবং নাম্বার (Internet Corporation for Assigned Names and Numbers)। 

একবার আইসিএনএএন-এর সাথে একটি ডোমেইন নেম রেজিস্টার করা হয়ে গেলে, অন্য কেউ তা ব্যবহার করতে পারে না। ডট কম (.com) হচ্ছে ইউআরএল এর শেষ অংশ যাকে টপ লেভেল ডোমেইন (TLD) বলা হয়। বিভিন্ন রকম TLD হয়ে থাকে যেমন: .Org, .Net, Info, .Gov ইত্যাদি।

ডোমেইন এন্ডিং পার্টটি অর্থ্যাৎ TLD আপনার সাইটটি কী ধরণের ওয়েবসাইট তা নির্বাচন করার একটি স্ট্যান্ডার্ড। যেমন- ডট এডু (.Edu) ডোমেইন এন্ডিংটি মূলত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হয়।

আপনি যখন কোনো ওয়েবসাইটে যান, আপনার টাইপ করা ওয়েবসাইটটির আইপি অ্যাড্রেসটি খুঁজে পাওয়ার জন্য আপনার কম্পিউটারটি একটি ডিএনএস (Domain Name System) ব্যবহার করে।

ডিএনএস অনেকটা ট্রান্সলেটরের মতো কাজ করে। এটি মানুষের ভাষাকে কম্পিউটারের ভাষায় ট্রান্সলেট করে আইপি অ্যাড্রেস ম্যাপ করতে সাহায্য করে। যেমন- Projuktiravijatri.com কী তা কম্পিউটার জানে না। এটি কেবল কীভাবে কোনো আইপি অ্যাড্রেসে যেতে হবে তা জানে। ডিএনএসের সাহায্যে কম্পিউটার আমাদের টাইপ করা ওয়েব অ্যাড্রেস (Projuktiravijatri.com) দিয়ে গুগলের আইপি অ্যাড্রেস ম্যাপ করতে পারে।   

ইন্টারনেটের ইতিহাস

বর্তমানে, ইন্টারনেট আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে, আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিনোদন, সংবাদপত্র এবং পড়াশোনা সব কিছুতেই এখন আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি। তাই এর পিছনের হিস্টোরি সম্পর্কে জানাও আমাদের জন্য অনেক প্রয়োজনীয়।

তাহলে চলুন ফিরে যাই ১৯৫০ এর দশকে, যখন ইন্টারনেটের অস্তিত্বের আবির্ভাব ঘটেছিলো। তখনকার সময়ে, কম্পিউটারগুলো ছিলো বিশাল আকৃতির, আর তখনকার প্রোগ্রামাদের এমন বিশাল আকৃতির কম্পিউটারের সাথে সরাসরি ইন্টারেক্ট করতে হতো। তখন কম্পিউটিং রিসোর্স খুব কম ছিলো, একটি কম্পিউটারে দিয়ে অনেকেই কাজ করতে হতো। 

১৯৬০ দশকের শেষের দিকে, মার্কিন সরকার DARPA নামক একটি প্রজেক্ট তৈরি করেছিলেন। যার মাধ্যমে ইন্টারনেটের প্রথম সংস্করণ হয় যা বর্তমানে আমাদের কাছে আরপানেট (ARPANET) নামে পরিচিত। শেষ পর্যন্ত, কম্পিউটার প্রোগ্রামাররা একটি সিংগেল কম্পিউটিং রিসোর্স থেকে কম্পিউটারে রিমোট অ্যাক্সেস করতে সক্ষম হয়েছিলো।

তবে তখনও একটি বড় সমস্যা ছিল, নেটওয়ার্কগুলি একে অপরের সাথে কথা বলতে পারেনি। এটি ১৯৭০ দশকে কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে এই সমস্যাটির সমাধান হয়।

কম্পিউটার বিজ্ঞানী ভিন্টন সারফ এবং বব কাহনকে (Vinton Cerf ও Bob Kahn) ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রোটোকল (Transmission Control Protocol) এবং ইন্টারনেট প্রোটোকল (Internet Protocol) অর্থাৎ টিসিপি / আইপি (TCP/IP) তৈরি করেছিলেন।

কিন্তু কেবলমাত্র কয়েকটি কম্পিউটার বিশ্ববিদ্যালয়, সরকার এবং ব্যবসায়ীরা তাদের অফিশিয়াল কাজে টিসিপি/আইপি (TCP/IP) গ্রহণ করতে পারতেন। পরবর্তিতে ৫০ বছরের ব্যবধানে, কোটি কোটি কম্পিউটার। অবশেষে, বিশ্বজুড়ে মানুষ একে অপরকে ডেটা আদান-প্রদান করতে সক্ষম হয়, তবে তখনও একটি সমস্যা ছিলো। তারা শুধু টেক্সট সেন্ড করতে সক্ষম ছিল।  

তারপরে, ১৯৯০ দশকে, টিম বার্নার্স-লি (Tim Berners-Lee) নামে একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (World Wide Web) আবিষ্কার করেন। এটি বিভিন্ন প্রোটোকল ব্যবহার করে ওয়েবপেইজ গুলোতে ইনফরমেশন ডিসপ্লে করতো এবং এটি ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করার মূল উপায় হয়ে উঠেছিলো।

সেই সময়ে যাদের ইন্টারনেট সংযোগ ছিল তারা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের ইনফরমেশন ও রিসোর্স অ্যাক্সেস করতে পারতো। বর্তমানে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব তৈরির ৩০ বছর হয়ে গিয়েছে এবং আমরা সাধারণ ইমেল ম্যাসেজ সেন্ড করা থেকে শুরু করে ভিডিও চ্যাট করা, তাৎক্ষণিক নিউজ আপডেট পাওয়া, খাবার অর্ডার করা, বই কেনা এসব কাজ মিনিটের মধ্যে করতে পারি। 

IPV4, IPV6 ও NAT

ইন্টারনেট প্রোটোকল (Internet Protocol) ভার্সন ফোর বা IPv4, এটি ৩২ বিটের সমন্বয়ে গঠিত, যা ৪ টি গ্রুপে বিভক্ত রয়েছে। বর্তমানে ওয়েবে ৪.৩ বিলিয়নেরও বেশি ওয়েবসাইট রয়েছে। কিন্তু IPv4 ভার্সনে সম্ভাবত ৪.৩ বিলিয়ন আইপি অ্যাড্রেস রয়েছে।

তার মধ্যে কিছু আইপি অ্যাড্রেস বিশেষ উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ (রিজার্ভ) করা। আপনি কি জানেন যেসব ডিভাইস ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত প্রত্যেকটি ডিভাইসেরই আইপি এড্রেস রয়েছে? তাই বিশ্বজুড়ে অলরেডি আইপি অ্যাড্রেসের এই সংখ্যাটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। তাহলে এখন আমরা আইপি অ্যাড্রেসগুলো কোথায় পাচ্ছি?

IPv6 অর্থাৎ ইন্টারনেট প্রোটোকল ভার্সন সিক্স এর মাধ্যমে। IPv6 অ্যাড্রেস ১২৮ বিটের, যা IPv4 তুলনায় চারগুণ বেশি। তাই IPv6 অ্যাড্রেসের এই সংখ্যাটি ছাড়িয়ে যেতে আরো অনেক সময় অতিবাহিত করতে হবে। 

IPv4 এর সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্য নেটওয়ার্ক অ্যাড্রেস ট্রান্সলেশন (Network Address Translation) অর্থাৎ NAT ব্যবহার করা হয়। NAT প্রাইভেট আইপি অ্যাড্রেসগুলোকে পাব্লিক আইপি অ্যাড্রেসে ট্রান্সলেট করে IPv4 ভার্সনের পাব্লিক আইপি অ্যাড্রেসগুলো সেভ করতে সাহায্য করে থাকে।

NAT কে একটি কোম্পানির রিসেপশনিস্ট হিসাবে কল্পনা করা যায়। যেমন- যখন আপনি কোনো কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করতে চান প্রথমে রিসেপশনিস্টের কাছে কল করেন এবং তিনি আপনার কলটি কোম্পানির অভ্যন্তরীণ কোনও প্রাইভেট নাম্বারে ট্রান্সফার করে থাকেন।


এই প্রকাশনায় নেটওয়ার্কিং ও এর সাথে সম্পৃক্ত ওয়েব সম্পর্কে অল্প-বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে। অনেক টার্মের বিস্তারিত আলোচনা এখানে করা হয়নি। খুব শীগ্রই আমরা সেসকল বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশনা নিয়ে উপস্থিত হবো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।