আমাদের আগের প্রকাশিত লেখা ডিজিটাল মুদ্রার অপর নাম ‘বিটকয়েন’– থেকে আশাকরি ডিজিটাল মুদ্রা সম্পর্কে কিছু ধারণা পেয়েছেন। অনেক ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা আমরা দেখতে পাই বর্তমানে, এদের প্রত্যেকেরই কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। চলুন আজ জেনে নেই এমনি পরিচিত কিছু ডিজিটাল মুদ্রা সমন্ধে।
Zcash (জেডক্যাশ) – জেডক্যাশ ও বিট কয়েন এর তুলনাটা অনেকটা HTTP vs HTTPS এর মতো। এক্ষেত্রে, জেডক্যাশ হল HTTPS। বিটকয়েন এর তুলনায় জেড ক্যাশ এ নিরাপত্তার বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। জেডক্যাশ দাবি করে যে তারা “zk-SNARKs“ নামক একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে যার মাধ্যমে তারা ইউজারদের সংরক্ষিত ট্রান্সজেকশন (অর্থাৎ Shielded Transactions) এর নিশ্চয়তা প্রদান করে। জেড ক্যাশ এ মুদ্রা আদান – প্রদান কারীদের নাম, লেনদেনের পরিমাণ এই সব গুরুত্বপূর্ণ সকল তথ্য গোপন থাকে, যার ফলে আর্থিক লেনদেন অনেক বেশি নিরাপদ হয়ে থাকে।
Dash (ড্যাশ) – সর্বপ্রথম এর নাম ছিলো XCoin, তারপর নাম পরিবর্তিত হয়ে ডার্ককয়েন রাখা হলেও বর্তমানে এর নাম ড্যাশ (ডিজিটাল ক্যাশ এর সংক্ষিপ্ত রূপ)। আপনি যদি টাকা লেনদেনের ব্যাপারে অনেক বেশি চিন্তিত হন এবং অনেক বেশি নিরাপত্তা চান তাহলে ড্যাশ আপনার জন্য। এটি বিটকয়েন এর এনক্রিপ্ট (গোপনীয়) সংস্করণ। এটি বিশ্বব্যাপী মাস্টারনোড নেটওয়ার্ক এ পরিচালিত হয় বলে আপনার লেনদেন এর ট্র্যাক রেকর্ড খুজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। অনলাইন ব্লকচেইন কমিউনিটিতে এর জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে গিয়েছে। এটি আবিষ্কার এবং উন্নয়নে কাজ করেছেন ঈভান ডাফফিল্ড। পরবর্তীতে কোনো এক লেখায় ড্যাশ এর বিস্তারিত ফিচার নিয়ে আলোচনা করা হবে।
Ethereum (ইথেরিয়াম) – ইথেরিয়াম এমন একটি ডিজিটাল মুদ্রা যা নিজস্ব একটি ভার্চুয়াল মেশিন সরবরাহ করে থাকে যাকে “ইথেরিয়াম ভার্চুয়াল মেশিন” বলা হয়। এই মেশিনের মাধ্যমে সহজেই পিয়ার – টু – পিয়ার যোগাযোগ করা হয়ে থাকে “ইথার” নামক ক্রিপ্টোকারেন্সি এর সাহায্যে। ইথেরিয়ামে আপনি নিরাপদ লেনদেন করতে পারবেন অপরিচিত যেকোনো কারোর সাথে কেননা সকল লেনদেন “স্মার্ট কনটাক্ট” এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয় ব্লক চেইন এর মাধ্যমে।
Litecoin (লাইটকয়েন) – লাইটকয়েন নামের মতই লাইট অর্থাৎ হালকা ডিজিটাল মুদ্রা। অনেক দ্রুত ব্লক তৈরি করার ক্ষমতা থাকার কারণে এর ট্রান্সজেকশন অনেক দ্রুত হয়ে থাকে যার জন্য সবার মাঝে লাইট কয়েন এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। চার্লি লি, যিনি একজন এম আই টি (Massachusetts Institute of Technology, USA) গ্রাজুয়েট এবং গুগলের প্রাক্তন চাকুরিজীবী, তিনি এই মুদ্রার আবিষ্কারক।
Bitcoin (বিটকয়েন) – বিটকয়েন সবচেয়ে পরিচিত এবং বর্তমানে সর্বোচ্চ ব্যবহৃত ডিজিটাল মুদ্রা। বিটকয়েন দিয়ে জিনিস পত্র কেনা বেচার জন্য কোন ধরনের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রয়োজন নেই বললেই চলে। বিটকয়েন এর ওয়ালেট আপনি সহজেই আপনার মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে ইন্সটল করে নিতে পারবেন। ইন্সটল এর পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিটকয়েনের একটি এড্রেস তৈরি হয়ে যাবে যা আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। প্রয়োজনমতো একাধিক এড্রেস তৈরী করা যাবে। ইন্সটল করার পর বিটকয়েন এর সাহায্যে যেকোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন। বিট কয়েন এর আবিষ্কারক হলেন রহস্যময় বেক্তি – “সাতোশি নাকামোতো”।
Ripple (রিপল) – আপনি যদি তাৎক্ষণিক, দ্রুত, সচ্ছ ও কম খরচে আন্তর্জাতিক বাজারে লেনদেন করতে চান, তাহলে রিপল ব্যবহার করা খুবই ভাল একটি সিদ্ধান্ত হবে। ব্যাংক এর সাহায্যে ২ দেশের মধ্যে মুদ্রা আদানপ্রদানে রিপল সহায়তা করে থাকে। রিপল ব্যবহার এর অনেক গুলা সুবিধার মধ্যে একটি হলো – এটি চলতে কম ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটারই যথেষ্ট এবং এর নেটওয়ার্ক নির্ভরতা ও অনেক কম – কারন রিপল এর ক্ষেত্রে “মাইনিং” এর প্রয়োজন পড়েনা। এছাড়াও এর নিজস্ব ট্রান্সজেকশন প্রটোকল রয়েছে যার কারণে রিপল প্রচলিত ডিজিটাল মুদ্রা গুলো থেকে আলাদা।
উপরের ৬ টি ডিজিটাল মুদ্রা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে গেলে অনেক বড় হয়ে যাবে ভেবে আজ এই পর্যন্তই। অন্য কোনো দিন চেষ্টা করবো প্রতিটি মুদ্রা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ও গুরুত্বপূর্ণ আকারে তথ্য দেওয়ার।