ওপেন সোর্সে কেন অবদান রাখবেন?

why-contribute-open-source
why-contribute-open-source

এর আগে আমার প্রকাশিত লেখায় ওপেন সোর্স ও এর ইতিহাস সম্পর্কে আপনাদের ধারণা দিয়েছিলাম। আজকে ওপেন সোর্স প্রজেক্টে কেন অবদান রাখবেন সে বিষয়ে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো। 

ওপেন সোর্স প্রজেক্ট গুলো শিক্ষানবীশ সফটওয়্যার প্রকৌশলী ও পেশাদার সফটওয়্যার প্রকৌশলীদের জন্য বিশাল জ্ঞানের ভান্ডার। শুধু সফটওয়্যার প্রকৌশলীগণ নন, আমার মতো নন টেকি পাব্লিকও ওপেন সোর্স প্রজেক্টের সাথে জড়িত হয়ে অনেক কিছু শিখতে পারে। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক, কেন আপনি ওপেন সোর্স প্রজেক্টে অবদান রাখবেন?

নিজের স্কিল ডেভেলপ করার জন্য

আপনি একজন শিক্ষানবীশ সফটওয়্যার প্রকৌশলী। আপনি টুকটাক ইন্টারনেট থেকে টিউটোরিয়াল দেখে অথবা কারো কাছ থেকে টুকটাক কাজ চালানোর মতো কোডিং শিখেছেন। কোনো প্রজেক্টে প্র্যাক্টিক্যাল কাজ করলে আপনার স্কিল/দক্ষতা আরো ডেভেলপ করতে পারতেন। অথবা আপনি ভালো গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ পারেন, কিন্তু কোন প্রজেক্টে কাজ না করায় আপনার স্কিল তেমন ডেভেলপ করতে পারছেন না। অথবা আমার মতো আপনিও নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে চান। কিন্তু আপনাকে কেও বনের আশে পাশেও ভীড়তে দেয় না।

এমতঅবস্থায় আপনার জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে রেখেছে বিভিন্ন ওপেন সোর্স প্রজেক্ট। আপনি ওপেন সোর্স প্রজেক্ট গুলোতে অবদান রেখে নিজের জ্ঞান/দক্ষতা কে বিকাশিত করতে পারবেন। কোডিং, সফটওয়্যার টেস্টিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ডকুমেন্টেশন, লোকালাইজেশন, কমিউনিটি সাপোর্ট সহ বিভিন্ন ভাবে ওপেন সোর্স প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যা হয়ত অনেক মিলিয়ন ডলারের কোম্পানীতে ইন্টার্নশিপ করেও আপনি পাবেন না। আপনি চাইলে একাধিক মাধ্যমে কাজ করতে পারেন (যদি আপনার লক্ষ্য হয় এখাধিক দক্ষতা অর্জন করা) এখানে কেউ আপনাকে বাধা দিবেনা।

সফটওয়্যার প্রকৌশলী হলে আপনার জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে তৈরী ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, ডেক্সটপ সফটওয়্যার, মোবাইল অ্যাপ সহ অসংখ্য প্রজেক্ট অপেক্ষা করছে। আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইনার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য ভিজ্যুয়াল ডিজাইন, লোগো, UI/UX সহ অন্যান্য ডিজাইন নির্ভর যেকোনো কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আপনি যদি ওয়েব ডেভেলপার হয়ে থাকেন তাহলে অসংখ্য ওয়েব ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে (ওয়েব সাইট ডিজাইন) অবদান রাখতে পারেন।

আপনার যদি ইংরেজি ভাষা থেকে অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করার দক্ষতা থাকে তাহলে ওপেন সোর্স প্রজেক্টের লোকালাইজেশনের কাজ করার মাধ্যমে আপনার ভাষার দক্ষতা আরো উন্নত করতে পারবেন। লেখালেখি আপনার পছন্দের কাজ হয়ে থাকলে; ওপেন সোর্স রিলেটেড ব্লগে আপনার লেখা জমা দিতে পারেন। অথবা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর জন্য ফেসবুক/ স্ট্যাকওভারফ্লো/ রেডিট/ টুইটার সহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফোরাম ও কমিউনিটিতে সাপোর্ট দিতে পারবেন। 

অন্যকে শেখানোর জন্য

জ্ঞান বিতরণ করলেই তা বৃদ্ধি পায়। আপনার জ্ঞান আছে কিন্তু তা বিতরণ করার জন্য কাওকে পাচ্ছেন না? ওপেন সোর্স প্রজেক্টের মাধ্যমে আপনি নিজের জন্য মেন্টর যোগাড় করতে পারবেন, আবার অন্য কারো মেন্টর হয়ে তাকে গাইডলাইন দিতে পারবেন।

নিজের মতো আরো অনেকজনের সাথে সাক্ষাতের জন্য

আপনার মতোই আরো অনেক জ্ঞান পিপাসু মানুষ ওপেন সোর্স কমিউনিটিতে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। আপনি তাদের সাথে যুক্ত হয়ে আপনার মতো আরো মানুষ খুঁজে পেতে পারেন। লোকাল কমিউনিটির মিটআপে/ইভেন্টে যোগ দিতে পারেন, অনলাইনে অফলাইনে তাদের সাথে আড্ডা দিতে পারবেন। তাদের সাথে নিজের নলেজ শেয়ার করতে পারবেন। ওপেন সোর্স কমিউনিটির মাধ্যমে ভালো বন্ধু পাওয়ার উদারহণ খুব একটা কম নয়। আবার ওপেন সোর্স কমিউনিটির মাধ্যমে জুটি তৈরী হওয়ার উদাহরণও রয়েছে। 

নিজের সিভি ভারী করার জন্য

ওপেন সোর্স প্রজেক্টে আপনার অবদান সমূহকে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন এইটা দেখানোর জন্য যে “আপনিও পারেন”! বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করার ফলে আপনার অজান্তেই অনেকগুলো স্কিল তৈরী হয়ে গিয়েছে, যা সিভি ভারী করার জন্য যথেষ্ট!

নেতৃত্ব প্রদানের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য

প্রতিটা ওপেন সোর্স প্রজেক্টের জন্য রয়েছে বিশাল একটা কমিউনিটি। আপনি যদি মেন্টর বা রিপ্রেজেন্টেটিভ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার উপর দায়িত্ব পড়বে বিশাল সংখ্যক মানুষকে নিয়ে প্রজেক্ট টি পরিচালনা করার। তাদের কে নেতৃত্ব দেওয়ার। যা ক্যারিয়ারে প্রতিটি ধাপে অবশ্যই কাজে আসবে। 

ক্ষুদ্র একটি পরিবর্তনের চেষ্টা

ওপেন সোর্স প্রজেক্ট সমুহ নিজেই এক একটা আন্দোলন। কোন কিছুতে পরিবর্তন আনার আন্দোলন। উদাহরণ স্বরুপ, গুগল ক্রোম ব্রাউজারে ফায়ারফক্সের মতো ট্র্যাকার প্রটেকশন চান। আপনি চান কেও এই ফিচারটা ক্রোমে আনুক, অথবা আপনাকে সুযোগ দিক আপনি এনে দেবেন। গুগল ক্রোমে সে সুযোগ আপনি না পেলেও ওপেন সোর্স প্রজেক্ট ক্রোমিয়াম ব্রাউজারে আপনি সে সুযোগ টা পাবেন। আপনি কোন কিছু করতে চাইলে, অথবা পরিবর্তন আনতে চাইলে আপনি খুব সহজেই তা করতে পারবেন। বেশিরভাগ ওপেন সোর্স প্রজেক্ট (সবগুলো নয়) তার ব্যবহার কারীদের ফ্রি বা বিনা মুল্যে উপভোগ করতে দিয়ে থাকে। তাই আপনার একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা হাজার মানুষের জন্য কল্যাণকর হতে পারে।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, আমি ওপেন সোর্স থেকে কি কি পেয়েছি? লোকাল মজিলা কমিউনিটির জন্য ব্যানার ও ফেস্টুন ডিজাইন করে আমার গ্রাফিক্স ডিজাইনের স্কিলটুকু তৈরী করেছি। উবুন্টু বাংলাদেশ কমিউনিটি / লিনাক্স বাংলাদেশ কমিউনিটি / মজিলা বাংলাদেশ / মজিলা কিউএ কমিউনিটি থেকে অনেক ভালো বন্ধু পেয়েছি। আড্ডা দিয়েছি ঘন্টার পর ঘন্টা। সবচেয়ে বড় বিষয় আমি একজন নন টেকনিকাল মানুষ হয়েও কিছু হলেও টেকনোলজি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছি।

আপনি ওপেন সোর্স প্রজেক্টে অবদান রাখতে চান? যুক্ত হতে চান ওপেন সোর্স কমিউনিটির সাথে? এটা নিয়ে অবশ্যই পরবর্তীতে লেখার চেষ্টা করবো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You May Also Like
ওপেন সোর্স ডিজাইন সফটওয়্যার Open Source Design Tools
আরও পড়ুন

৫টি সেরা ওপেন সোর্স ডিজাইন সফটওয়্যার

আপনি যদি ফটোগ্রাফি করে থাকেন অথবা প্রফেশনাল গ্রাফিক ডিজাইনার হোন অথবা ওয়েব বা সফটওয়্যার ডিজাইনার হোন অথবা আপনি…
open source operating system application linux advantages of open source software লিনাক্স এবং ওপেন সোর্সের ইতিহাস লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম লিনাক্স কি লিনাক্স ব্যবহার লিনাক্স ইন্সটল ওপেন সোর্স সফটওয়্যার কি ওপেন সোর্স কি মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলন ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম Projuktir Avijatri
আরও পড়ুন

লিনাক্স এবং ওপেন সোর্সের ইতিহাস

গত প্রকাশনার মাধ্যমে আশাকরি আপনারা লিনাক্স সম্পর্কে ধারনা পেয়েছেন। অনেকেই হয়ত জানেন লিনাক্স একটি ওপেন সোর্স সফটওয়্যার। মনে…
open-source-and-free-software ওপেন সোর্স ও ফ্রি সফটওয়্যার
আরও পড়ুন

ওপেন সোর্স ও ফ্রি সফটওয়্যার পরিচিতি

আমার সর্বশেষ লেখায় প্রকাশিত লেখায় ওপেন সোর্সের ইতিহাস নিয়ে ধারণা দিয়েছিলাম। আজকে ওপেন সোর্স ও ফ্রি সফটওয়্যারের সাথে…
Top Six CMS Intro
আরও পড়ুন

৬ টি জনপ্রিয় ও সেরা ওপেন সোর্স সিএমএস সফটওয়্যার

আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন, সিএমএস এর পূর্ণরুপ হচ্ছে কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS = Content Management System)। টেকনিক্যাল সংজ্ঞা…